কোথায় জানি দেখেছিলাম
গুলি খেয়ে পড়ে আছো একটি নিখোঁজ দেহ
হরিণ হলে ভালো করতে
চামড়া ছিলে নিতাম
লাল মাংসটুক ভাগ হয়ে যেত
কাটা চোখ দুটো শুধু ফেলে যেতাম ঘাসের উপর
থাকতে চেয়ে উদার আকাশের দিকে ।
কাল-শূন্যতার ভেতরে জড়াজড়ি করে থাকা
সপ্তর্ষি তারা গুলো দেখে হয়ত কাতর হয়ে
ভাবতে তুমি কত একা হয়ে গেছো...
কিন্তু একটা মানুষ হলে আসলে কিছু করার থাকে না
অন্যভাবে বললে মানুষ খাওয়াটা ট্যাবু
না' হলে...
তারচেয়ে আমি না-হয় পার্কের প্রেম শেষে ফেলে যাওয়া
কাগজের ছেড়া পাতাটা চিবিয়ে খেয়ে ফেলি
একটা সুখী হয়ে থাকা স্বৈরাচারীর ছবি গিলে
তারপর আর গিলতে পারি না,
তার দুর্বল দাঁত খুলে আমার গলায় আটকে যায়
তার হাত আমাকে জড়িয়ে ধরে ঝুলতে থাকে
ফাঁসির দড়ির মত।তারপর
সে হাসে...
আসলে আমি পালাচ্ছিলাম...
পালাচ্ছিলাম এসব থেকে
এসমস্ত রাত দিনের পুনরাবৃত্তি থেকে।
হয়ত আমি জন্মের আগেই একটা গুলির শব্দে ভয় পেয়ে
পুনঃ পুনঃ জন্মে দৌড়াতে দৌড়াতে
নিজেকে হারিয়ে ফেলেছিলাম।
কোথাও ইদুর হয়ে হয়ত কোন যুদ্ধের ভেতর দৌড়াচ্ছি
সিভিল বা প্রক্সি ওয়ার জাতীয় হবে কিছু একটা।
আমার শত্রু এবং মিত্র বদলে যাচ্ছে ক্রমাগত
সদ্য সেকা আটার রুটির গন্ধে পাগল হয়ে
প্রেমিকাকে ফেলে দৌড়াচ্ছি।
বুকটা তখনও লেফট রাইট লেফট রাইট করছে
বলছে কোন রাজধানী যেতে
বলছে যেন উদ্বাস্তু হই
বলছে ভাতের কুয়াশায়
অমর কয়েকটা রাত্রি যেন আমি
দেখে যেতে পারি...
আমার চোখে একটা পাহাড় ঘেরা সীমান্ত ভাসে,
একটা মেঘ,কয়েকটা বর্ডার গার্ড তাদের
নিখুঁত কালো ক্যামেরা নিরুদ্দেশে তাক করে
আছে।
এবার আমি পালাচ্ছিলাম একটা ছবি হয়ে যাওয়া থেকে।
সাদা-কালো বা তার মত দুঃখ নামের অশ্লীল ছবির ফ্রেমে
আটকে থাকার ইচ্ছে টা আমার ছিল না,
তবুও কেউ তুললো-
আমাকে পিটিয়ে মারার ছবি বা
যখন আমি সর্বস্বান্ত তাকিয়ে আছি
নায়িকার বুকের ভাঁজের দিকে
অথবা অনশনে কোন দয়ালু হাতের
বাড়িয়ে দেয়া পানির গ্লাস
আমার প্রতিশ্রুতিহীন ঠোঁট স্পর্শ করে
আছে...
আমি না করি নি,তারপর
জানি না কোন কারনে আমার কমবেশি চুলগুলো
হিঁচড়ে ধরে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হল রাস্তায়-
ভাবছিলাম কেন এমন হল?
মনে হল পালাচ্ছিলাম তাই বোধহয়।
ধারের টাকায় কেনা নতুন টি শার্টটা ছিড়ে ফেলা হল,
বুকের পাতলা লোমের ভেতর একটা আস্ত বাউল বাস করে
সেই কথাটা কি করে যেন জেনে গিয়েছিল তারা।
আমার পরিচয় চাইতেই
নাভীর নীচে জন্মদাগটা দেখাতে গিয়ে দেখা গেল
নেই সেটা
জায়গাটা একটা সাদার মত ভয়াবহ শূন্য হয়ে
আছে
ভাবলাম জন্মাইনিই বোধহয়
তাই আমি
একটা ভূল জন্মমুহূর্তের আগে
অতি উৎসাহী মৃত্যুর জন্য
অপেক্ষা করছি..
কিন্তু এতগুলো রাগী মুখ দেখে
মনের সেই ভাবটা গেল উড়ে,
নিজেকে বিরাট অপরাধী মনে হতে লাগল।
অনেকগুলি মানুষ
ঘৃনায় জ্বলছে
তীব্র দৃষ্টিতে তারা পতন চায়
কোন একটা কিছুর...
অতএব জনা কয়েক মিলে
লাথি মারতে শুরু করল।
আমি ছিটকে গেলাম
কাটা ষাঁড়ের মাথার মত।
তারা জানত কোন বিপ্লব অসম্পূর্ণ রাখা পাপ
খুব স্বাভাবিকভাবেই হাত আর পা গুলো
কি করল জানি না
মনে হল ওগুলো কোনদিন ছিলই না
মনে হল
আমি বোধহয় জিলা স্কুল মাঠের জোঁক ছিলাম
বহুকাল ধরে বুক আর পিঠ ঠেলে ঠেলে
চড়ে বেরিয়েছি
এই শহরটা
এই সমস্ত ভিড়
এতসব দিন রাত্রি...
অতঃপর আমি কিছু একটা গুরুতর দোষ মনে করার
চেষ্টা করতে থাকি,ব্যাথাটা কমে যদি বা
হ্যাঁ,অন্তত একটা ক্ষমাহীন অপরাধ
যার জন্য মরে যাওয়া স্থির করা যায়
যেটার জন্য মৃত্যু দন্ড পাবার পরেও
আসামী নির্বিকার চেয়ে থাকে
বিচারকক্ষের সিলিং ফ্যানের দিকে...
ভাবতে ভাবতে পেলামও একটা,
ছোটবেলায় আমার যে পাড়া ছিল
বন্ধুরা
বিকালে হাইড এন্ সিক খেলতাম।
একবার খেলার মধ্যেই কাউকে না বলে
মায়ের সঙ্গে চলে গিয়েছিলাম নানার বাড়ি
অন্ধকারে যখন ফিরছি
দেখা গেল পাড়ার মাথার উপর
নিস্প্রভ চাঁদ আলোতে
ক'টা ছেলে খুঁজছে কিছু,
বললাম 'এই ত আমি'
তারা যেন শুনতে পেল না
উদ্দেশ্যহীন খোঁজাখুঁজির মর্মটা তারা সেদিন
আধা পূর্নিমার রাতে বুঝে গিয়েছিল
তারা জীবনভর খুঁজতে থাকে
ঘেমে মাতাল হয়
আলো আঁধারির নব্য খেলায়।
একটা ভীষণ রোদের মধ্যে
মার খেতে খেতে
আমিও খেলি সেই পুরানো খেলাটা,
ভাবি, আমি নই, মরে যাচ্ছে পারস্যের শেষ কালো সিংহটি,
বীর হামজা তার রুপোর হাতল বসানো
ছুরিটি ধরে সুযোগ খুঁজছে
ইরানি কবিতাটা মনে পড়ছে না দেখে
আহত সে শ্বাস আটকে রেখে
জন্মমুহূর্তের ঠিক পেছনে চলে যাচ্ছে
অতি ধীরে ধীরে...
চিৎ-শোয়া আমি
দেখি
নীল আকাশে একটা ধূসর শকুন
কাঁদতে কাঁদতে উড়ে বেড়ায়।
আমি তার অশ্রুর নেশায় ক্রমাগত
ঠোঁট চেটে যাচ্ছি..
0 Comments