
মহাভাবনায় পঢ়ে গেলেন আর্কিমিডিস। সম্রাটের আদেশে মুকুটের কোন ক্ষতি করা যাবে না। আর্কিমিডিস ভেবে পান না মুকুট না ভেঙে কেমন করে তার খাদ বের করবেন। কয়েকদিন কেটে গেল । ক্রমশই অস্থির হয়ে ওঠেন আর্কিমিডিস। একদিন দুপুর বেলায় মুকুটের কথা ভাবতে ভাবতে সমস্ত পোশাক খুলে চৌবাচ্চায় স্নান করতে নেমেছেন। পানিতে শরীর ডুবতেই আর্কিমিডিস লক্ষ্য করলেন কিছুটা পানি চৌবাচ্চা থেকে উপছে পড়ল। মুহূর্তে তাঁর মাথায় নতুন চিন্তার উন্মেষ হল। এক লাফে চৌবাচ্চা থেকে উঠে পড়লেন । তিনি ভুলে গেলেন তাঁর শরীরে কোন পোশাক নেই। সমস্যা সমাধানের আনন্দে নগ্ন অবস্থাতেই ছুটে গেলেন রাজ দরবারে। মুকুটের সমান ওজনের সোনা নিলেন। একপাত্র পানিতে মুকুটটি ডোবালেন। দেখা গেল খানিকটা পানি উপছে পড়ল। এইবার মুকুটের ওজনের সমান সোনা নিয়ে জলপূর্ণ পাত্রে ডোবানো হল। যে পরিমাণ পানি উপছে পড়ল তা ওজন করে দেখা গেল আগের উপছে পড়া পানি থেকে তার ওজন আলাদা। আর্কিমিডিস বললেন মুকুটে খাদ মেশানো আছে। কারণ যদি মুকুট সম্পূর্ণ সোনার হত তবে দুটি ক্ষেত্রেই উপছে পড়া পানির ওজন সমান হত।
এই অাবিষ্কারের মধ্য দিয়ে প্রমাণিত হল একটি বৈজ্ঞানিক সূত্র।
”তরল পদার্থের মধ্যে কোন বস্তু নিমজ্জিত করলে সেই বস্তু কিছু পরিমাণ ওজন হারায়। বস্তু যে পরিমাণ ওজন হারায় সেই পরিমাণ ওজন বস্তু দ্বারা অপসারিত তরলের ওজনের সমান।”
এই বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব আর্কিামিডিসের সূত্র নামে বিখ্যাত।
আর্কিমিডিসের জন্ম আনুমানিক খ্রীষ্টপূর্ব ২৮৭ সালে। সিসিলি দ্বীপপুঞ্জের অন্তর্গত সাইরাকিউস দ্বীপে। পিতা ফেইদিয়াস ছিলেন একজন জ্যোতির্বিদ । কৈশোর ও যৌবনে তিনি আলেকজান্দ্রিয়ায় গিয়ে পড়াশুনা করেছেন। সেই সময় আলেকজান্দ্রিয়া ছিল জ্ঞান বিজ্ঞান চর্চার পীঠস্থান। ছাত্র অবস্থাতেই আর্কিমিডিস তাঁর অসাধারণ বুুদ্ধিমত্তা ও সুমধুর ব্যক্তিত্বের জন্য সর্বজন পরিচিত হয়ে ওঠেন। তাঁর গুরু ছিলেন ক্যানন। ক্যানন ছিলেন জ্যামিতির জনক মহান ইউক্লিডের ছাত্র। পূর্বসূরিদের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনি চেয়েছিলেন গণিতবিদ হবেন। অঙ্কশাস্ত্র বিশেষ করে জ্যামিতিতে তাঁর আগ্রহ ছিল সবচেয়ে বেশি। ইউক্লিড ক্যানন যেখানে তাদের কাজ সমাপ্ত করেছিলেন, আর্কিমিডিস ঠিক সেখান থেকে তাঁর কাজ আরম্ভ করেন।
আর্কিমিডিসের একটি আবিষ্কার হল পুল ও লিভার। একবার একটি জাহাজ চরে এমন ভাবে আটকে গিয়েছিল যে সেটি আর কোন ভাবেই পানিতে ভাসানো সম্ভব হচ্ছিল না। আর্কিমিডিস ভালোভাবে সবকিছু পর্যবেক্ষণ করলেন। তাঁর মনে হল একমাত্র এই জাহাজটিকে যদি উচু করে তোলা যায় তবেই জাহাজটিকে পানিতে ভাসানো সম্ভব। আর্কিমিডিসের কথা শুনে সবাই হেসেই উড়িয়ে দিল।
অল্প কয়েকদিনের মধ্যে উদ্ভাবন করলেন লিভার আর পুলি। জাহাজ ঘাটে এটা উঁচু জায়গায় লিভার খাটাবার ব্যবস্থা করলেন। তার মধ্যে বিরাট এক দড়ি বেঁধে দিলেন। দড়ির এক প্রান্ত জাহাজের সাথে আষ্টে-পিষ্টে বাঁধা হল।
এই অদ্ভুত ব্যাপার দেখতে সম্রাট হিয়েরো নিজেই এলেন জাহাজ ঘাটায়। নগর ভেঙে যেখানে যত মানুষ ছিল সকলে জড় হয়েছে। আর্কিমিডিস সম্রাটকে অনুরোধ করলেন লিভার লাগানো দড়ির আরেক প্রান্ত ধরে টানতে। আর্কিমিডিসের কথায় সম্রাট তাঁর সমস্ত শক্তি দিয়ে দড়িটা ধরে টান দিলেন। সাথে সাথে অবাক কান্ড। নড়ে উঠল জাহাজটি। চারদিকে চিৎকার পড়ল। এবার সম্রাটের সাথে দড়িতে হাত লাগালো আরো অনেকে। সকলে মিলে টান দিতেই সত্যি সত্যি জাহাজ শূন্যে উঠতে আরম্ভ করল। সম্রাট আনন্দে বুকে জড়িয়ে ধরেন আর্কিমিডিসকে।
এই আবিষ্কারের ফলে বড় বড় পাথর, ভারী জিনিস, কুয়া থেকে জল তোলার কাজ সহজ হল।
0 Comments